বঙ্গমাতা রেণু
প্রফেসর সেখ বেনজীর আহমেদ
ফুলের পাপড়ি দেখেছ
দেখনি ফুলের রেণু,
রাখালের মুখে সুর তুলেছে
অতি সাধারণ বেণু।
বেণুর সুরে বিমোহিত মুগ্ধ
নয়নাভিরাম পাপড়ি,
ধূলিকণা বলে দূরে ফেলে দিলে
সুর শেষে বাঁশরি।
রেণু থেকে বঙ্গমাতা আজি
রচি তাঁর ইতিকথা,
শৈশব কৈশোর স্মৃতি তাঁর
দুঃখ গাঁথা।
জানিত কেউ শৈশবে উদাও
অফুরন্ত আনন্দ হাসি,
যাহার অবদানে বঙ্গবন্ধু বিশ্বনেতা
তাঁহারে চেনেনা বঙ্গবাসী।
পিতা তাঁর জহুরুল হক
মাতা হোসনে আরা,
তিন থেকে পাঁচ বছরে
সব হলো সারা।
উনিশের ত্রিশে জন্ম নিয়ে
পঁয়ত্রিশে অনাথ,
দাদা তাঁর গত হলো
অপূর্ণ স্বাদ আহ্লাদ।
এক হাতে খেলার পুতুল
অন্যহাতে হিমালয়,
এসেছে যত ধকল সকল
সব্যসাচী নারী সামলায়।
যত ত্যাগ তিতিক্ষা প্রতিবাদ
যত আন্দোলন সংগ্রাম,
পিছনে এক নারী মহীয়সী
সামনে শেখ মুজিবুর রহমান।
আমাদের রেণু নয় কমলা নেহেরু,
নয় উইনি মেন্ডেলার মত,
পতির সাথে সতীসাবিত্রীর নাম
উচ্চারিত নয় তত।
বঙ্গবন্ধুর প্যারলে মুক্তি এমন
উক্তি ধিক শতবার,
সাতই মার্চের ভাষণ দিতে
সব অনুপ্রেরণা তাঁর।
যত সাদামাটা তত অসাধারণ
তত প্রজ্ঞাময়,
শেখ মুজিব জাতির পিতা
রেণু বঙ্গমাতা নিশ্চয়।
আষাঢ় শ্রাবণ কাঁদিছে এমন
বিরহ বেদনায়,
যে মাসে জন্ম সে মাসে সহমরণ
বুলেটের আঘাতে বাংলায়।
জাতি দিশেহারা, ছন্নছাড়া
আমরা কি তব জারজ?
রাজাকার আলবদর খুনির দোসর
স্বাধীনতা বিপন্নতে গরজ।।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার ডাকনাম ছিল রেনু। তার পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। পাঁচ বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মারা যান। তিনি তার স্বামী শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো বোন ছিলেন। শেখ মুজিবের বয়স যখন ১৩ ও বেগম ফজিলাতুন্নেসার বয়স যখন মাত্র তিন, তখন পরিবারের বড়রা তাদের বিয়ে ঠিক করেন। ১৯৩৮ সালে বিয়ে হবার সময় রেনুর বয়স ছিল ৮ বছর ও শেখ মুজিবের ১৮ বছর। পরে এই দম্পতির দুই কন্যা ও তিন ছেলে হয়। তারা হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেগম ফজিলাতুন্নেসা পরিবারের অন্য সদস্যদের (শেখ হাসিনা, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেল, এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং অন্যান্য) সাথে মগবাজার অথবা কাছাকাছি কোনো এলাকার এক ফ্ল্যাট থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিলেনে ১২ মে ১৯৭১ এবং ধানমন্ডির বাড়ি ২৬, সড়ক ৯এ (পুরনো ১৮) তে বন্দি অবস্থায় ছিলেন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট, এক দল নিম্নপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতির বাসভবন আক্রমণ করে শেখ মুজিবকে, তাকে, তার পরিবারের সদস্যদেরকে এবং তাঁদের ব্যক্তিগত কর্মচারীদেরকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন ফজিলাতুন্নেছার দশ বছরের ছেলে শেখ রাসেল, তার বাকি দুই ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল এবং রসি জামাল, ভাই আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, দেবর শেখ নাসের, ভাতিজা শেখ ফজলুল হক মণি এবং তার স্ত্রী আরজু মণি। সেসময় পশ্চিম জার্মানি সফরে থাকার কারণে শুধুমাত্র তার কন্যাদ্বয় শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এবং শেখ রেহানা প্রাণরক্ষা পান। পরে তাদেরকে বাংলাদেশ আসতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা করে অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের সহকর্মী এবং সেনা কর্মকর্তারা, যার মধ্যে ছিল মুজিবের সহকর্মী এবং প্রাক্তন বিশ্বাসপাত্র খন্দকার মোশতাক আহমেদ তিনি তৎক্ষণাৎ রাষ্ট্রপতির উত্তরসূরি হন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের ‘ঢাকা ইউজিন বোস্টার’ বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে লরেন্স লিফশুলজ সিআইএকে এই অভ্যুত্থান এবং হত্যার জন্য অভিযুক্ত করেন।
মুজিব হত্যার ফলে সারাদেশ কয়েক বছরের রাজনৈতিক অশান্তির মধ্যে নিমগ্ন হয়। অভ্যুত্থানের নেতাদের সিংহাসনচ্যুত করা হয় একের পর এক পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যামে এবং রাজনৈতিক হত্যার ফলে দেশটি অচল হয়ে পড়ে। ১৯৭৭ সালে আরেকটি অভ্যুত্থানের পর শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপিত হয় এবং সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ক্ষমতা পান। ১৯৭৮ সালে জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে নিরাপত্তা অধ্যাদেশ জারি করেন এবং মুজিব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে খালাস দেন।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া